অক্ষরের খোলস আড়ালে – ১
এসো
হে অক্ষরের বিষণ্ণ খোলস
তোমার
আড়ালে আজ এসো নেচে উঠি হাত ধরাধরি করে
অংশত
লাজুক আকাশে ক্যালেন্ডার বলে দিচ্ছে
এক্ষুনি
শুরু হবে নেশাতুর বর্ণমালাদের ভাইফোঁটা
ব্লাউজের
ক্লিভেজ থেকে বেরিয়ে আসবে রঙিন শুঁয়োপোকাদের শুঁড়
ডাক্তারবাবু
বলে দিয়েছেন, - এখন থেকে আমাদের
হিমোগ্লোবিনের
নাম হবে ‘কাদম্বরী’
সোঁদাগন্ধ
ঠোঁটে লেগে থাকা
সহবাসকে
আজ ‘ভাই ছুটি’ বলেও ডাকা যেতে পারে
আর
আগুনে পুড়ে যাওয়া চুলের নিবেদনে লেগে থাকবে
খানিকটা
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আপেলের মতো বুক
এবার
আমরা পেটকাটি ঘুড়িতে লিখে নেবো হোহো, হাহা’র প্রেসক্রিপশন
আলোক্রসিং
থেকে উড়িয়ে দেবো নচ্ছারপনার ইস্কুলবই
পেটো
আর ক্ষুরের শব্দে ক্রিয়াবিশেষণেরা পেচ্ছাপ করে ফেলবে বিছানায়
আমাদের
শীতকালীন লাশ বইতে বইতে
বেসুরো
নৌকাস্বপ্নরা ঘাট থেকে ফিরে যাবে প্রকৃতিপর্যায়ের দিকে
এবং
আমরা দল বেঁধে সোনাগাছিতে বেড়াতে যাবো আজ
অক্ষরের খোলস আড়ালে - ২
অসুখ
প্রণালী থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়
তোমার
স্পেস ও বিন্দুদের মধ্যে কি খরস্রোত শারীরিক প্রেম
যোনিচিহ্নটির
জন্যে কীবোর্ডে আলাদা কিছু নেই
নেই
নির্জনতার, অস্ত্রাঘাতের, উপসর্গদের জন্যে
স্যাক্সোফোনের
উদাসীন স্বরলিপিটির জন্যে
এমনকি
রাত্রের শূককীট, মূককীট বা পিউপাদের জন্যেও
খোঁজ
নেই প্রচ্ছন্ন রাখালিয়া বাঁশিটির
তবু
এই ব্রজধামে প্রিয়তম আমাদের খোলসের সেলিব্রেশন
পাতা
ওলটাতে ওলটাতে ঠিক যেভাবে বেজে ওঠেন মীরাবাঈ
‘হোরি
খেলতা হ্যায় গিরিধারি’
আর
সমস্ত দূরত্বের সর্বনাম মুছে দিয়ে
গোটা
গোটা অক্ষরের চাদরের তলায়
আমরা
জড়িয়ে ধরি পরস্পরকে
মাদারি
কা খেল দেখতে দেখতে
তুমিও
কি এমনি করেই ভাবো ?
অক্ষরের খোলস আড়ালে – ৩
বেশ্যার
উদাসীন শায়াটির জন্য কোনো আবডাল জেগে নেই
শুধু
তারে ঝুলে থাকা অতীতের আচ্ছন্ন যন্ত্রণামুহূর্তগুলি আছে
অস্থাবর
যৌনমুদ্রা আর রক্তদাগ নিয়ে
আমাদের
জুয়াখেলা আর সংকীর্তন একসঙ্গে চলছে চলবে
লুকিয়ে
দারুব্রহ্মকে দু’চারটি ফুল চড়াই
বলা
তো যায় না, কে যে কোথায় কখন...
কি
করে জানবো, কার যে কতোটা পাথেয়...
তবু
কি ভাবে যেন জেনে গেছি
আমাদের
দিকে ছুঁড়ে মারা অক্ষরের ভূতভবিষ্যৎ
আমাদেরই
উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি-চাপাটির আরোহী অবরোহী
পরশ্রীকাতর
মশারির আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে
আজকাল
গোপনে ষড়যন্ত্র লিখে রাখি
বিছানায়
ছড়ানো চোরকাঁটা বাছতে বাছতে
চিবিয়ে
খাই পরস্পরের হাড় ও মাংসের ভূগোল
প্রিয়
অক্ষর, আমাদের গৃহযুদ্ধ আর রিরংসার ভ্রমণসূচী
তুমি
কিন্তু চিরকাল লুকিয়ে রেখো নিজস্ব খোলসের ভেতর
অক্ষরের খোলস আড়ালে – ৪
উনুনের
উৎসর্গের ভেতর লেগে আছে নাতিশীতোষ্ণ দ্রাক্ষাবাতাস
নীলাভ
শিখাদের ত্রিযুগীনারায়ণে
আজ
জ্বালানী হিসেবে গুঁজে দিয়েছি নিজস্ব হাত ও পা
পুরুষাঙ্গটি
কখন জ্বলতে জ্বলতে খসে পড়েছে খেয়াল নেই
অক্ষরের
জতুগৃহেরা জ্বলেছে দাউ দাউ লোভে
ইতস্তত
শরীরের আঁচে এইবার তোমার হেঁশেলে
রান্না
হবে ভাটিয়ালী দেহাতী গানেরা
স্মৃতিকাতর
পাখিডানাটিও আজ দারুণ পুড়েছে
অপর্যাপ্ত
উত্তাপ দিয়েছে আমাদের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিগুলি
পুড়ে
গেছে আমাদের সন্তান ও মেয়েমানুষদের রক্তমাখা পোশাক
চুলেদের
কারুবাসনা এবং পরশ্রীকাতর ইস্কুলবই
এই
মহান তাপবিকিরণের আড়ালে
ক্রমশ
বিকশিত হচ্ছে আমাদের টকটকে ধাতব হৃদপিণ্ড
এইবার
সমস্ত খোলস পুড়িয়ে
আমরা
সবাই উলঙ্গ শুয়ে থাকব লবণ ও গন্ধকের সৈকতে
অক্ষরের খোলস আড়ালে – ৫
সারাটা
জীবন আমি চৌকাঠের ওপরে দাঁড়িয়ে
দুহাত
নেড়ে যাচ্ছি পাখির ডানার মতো
একবিন্দু
পৌঁছচ্ছি না কোথাও
মাটি
থেকে একটুও ওপরে উঠতে পারছি না
তবু
একমাত্র এভাবেই যদি পৌঁছতে পারি তোমার কাছাকাছি
অক্ষরেরা
আমার ওপর রেগে যাচ্ছে
ঘাড়
কাত করে রোঁয়া ফুলিয়ে ঠুকরে দিচ্ছে আমার চোখে
আমার
অন্ধতা বেয়ে দরদর করে ঝরে পড়ছে
মদ
রঙের শব্দে ভেজানো ঘটমান বর্তমানটুকু
ধুয়ে
যাচ্ছে আমার যাবতীয় প্রচেষ্টার চিহ্ন ও সূত্রেরা
হঠাৎ
একটা গানের ওপর হোঁচট খেয়ে পড়তেই
আমার
সারা গায়ে গজিয়ে উঠেছে ক্যাকটাস ঝোপ
আমি
কিছুতেই ঠোঁট মেলাতে পারছি না
তাদের
গম্ভীরা আর আলকাপে
শুধু
একটু পুড়ে যাবার জন্য নিজেরই দুহাত দিয়ে
ক্রমাগত
বাতাস করে যাচ্ছি নিজেকে
দেখা
যাক, এভাবেই যদি পৌঁছতে পারি তোমার কাছে...
কবিতাগুচ্ছ বিভাগে থাকলেই ভাল হ'ত।
ReplyDeleteএটা তো একান্ত ভাবেই সম্পাদকের সিদ্ধান্ত।
ReplyDelete