।। বাক্‌ ১২০ ।। রঙ্গন রায় ।।







শূন্যস্থানের দিনরাত্রি

স্বপ্ন আধা খ্যাচড়াই হয়। কিন্তু তা বলে এরকমএর কোনো মাথা নেই মুন্ডু নেই। আমি জোর গলায় দাবী রাখছি যে এইমাত্র আমি যে স্বপ্নটা দেখে জেগে উঠলাম তা যেন অনেকটা ফ্রয়েডকেও ঘাবড়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। একটা চমৎকার গল্পের মত প্লটটা থুড়ি স্বপ্নটা এগোতে শুরু করলো। ঘটনা -চরিত্র -কাহিনীতে ঠাসাঠাসি এবং যথারীতি 'শেষ হইয়াও না হইলো শেষ'এর মত দুম করে থেমে গেলো। স্বপ্নতেও তিনটে বাজে , আমার ঘড়িতেও। পেন্ডুলাম দোলানো গ্রান্ডফাদার ক্লকটা আমার ঠাকুর্দার কেনা। মা প্রতি বৃহস্পতিবার ওতে দম দেন। ফ্রয়েড বলেছেন , "বেশিরভাগ মানুষ সাদাকালো স্বপ্ন দেখে। মাত্র ১৫% মানুষ রঙিন স্বপ্ন দেখে থাকে দুনিয়ায়।" আমি হলফ করে বলতে পারি যে আমি যে স্বপ্নটা দেখে জেগে উঠলাম সেটা সাদাকালো ছিলনা , সম্পূর্ণ রঙিন। আমি তবে পৃথিবীর সেই ১৫% মানুষের একজন। হঠাৎ খুব গর্ব হতে লাগলো। তবে যেসব চরিত্রের মুখ দেখলাম তাদের জীবনে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে পরেনা। কিন্তু ফ্রয়েড বলে দিয়েছেন ," আমরা স্বপ্নে এমন মুখগুলোই দেখে থাকি যাদেরকে জীবনে কখনো না কখনো কোথাও না কোথাও দেখেছি। একদম অপরিচিত চেহারা আমরা স্বপ্নে দেখতে পারিনা , কারণ অত কল্পনার জোর আমাদের মস্তিষ্কের নেই।" তবে কি আমার মস্তিষ্কের জোর একটু বেশিই? ধুরহাবিজাবি ভাবনা চলে এলো মাথায়। এখন আর ঘুমই আসবেনা। বিছানায় বসে বসে ভাবতে থাকলাম যাদেরকে আমি স্বপ্নে দেখেছি তাদের বাস্তবে কোনোদিন দেখেছি কিনা। নাহ্ , মাথা দপদপ করছে। কপালের শিরায় কি টান। চোখের মধ্যে আঠা ---  বিছানা থেকে নেমে এলাম। টেবিলে বোতল রয়েছে। ঢকঢক করে আগে জল খাবো না ছাড়বো ভাবতে ভাবতেই বাইরে কি একটা পাখি ডেকে উঠলো। তার মানে ভোর হতে চলেছে। ভোর হওয়া মানেই যুদ্ধ শুরু। বাথরুমে পেস্ট ব্রাশ নিয়ে ঢুকে পড়লাম।
  জল খেয়েই বাথরুমে গিয়েছিলাম , ফিরে এসে তাই বোতলটা ফিল্টার থেকে ভরে নিতে হলো। আমি টেবিলে জগ রাখিনা। সাধারণত আমার এক ঘুমেই রাত কাবার হয়ে যায় , জলের দরকারই পরে না। আজ একটু ব্যাতিক্রম হয়ে গেলো। আমার বাথরুমে স্কাইলাইটের চৌকাঠে একটা টিকটিকি মরে পরে আছে , মানে ছিল। আমি রোজ পেচ্ছাপ করতে যখনই দাঁড়াই ওটার দিকে নজর পরে। প্রতিদিন দেহটা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে একদিন বিলীনের নেশায়। ওটাকে ফেলে দিতে আমার মন চায়না , রোজ দেখি আর সময়ের হিসেব নির্নয় করি। এসব ভাবতে বড় ভালো লাগে। কিন্তু এখন টিকটিকিটার দেহটা নজরে পড়লোনা। তবে কি বিলীন হয়ে গেছে?
  সাইকেলটা বের করতে গিয়ে দেখি পাম্প নেই। মেজাজটা হেব্বি খিঁচড়ে গেলো। পাম্পার বার করা আর এক ঝক্কি। পাশের বাড়ির লোক গুলোর কাছে সকাল সকাল কিছু চাইতে একদম ভাল্লাগেনা। ধুর! নীল ট্রাকশুটটা পড়ে বেরিয়ে পড়লাম। হেঁটে। দাঁত মাজলে মন ভালো থাকে। কিন্তু পেট ভালো থাকেনা। পকেটে মাত্র দশটা টাকা। এত্ত সকালে পুরির দোকান গুলোও খোলেনি বোধহয়। ভোরের শহরে ঝাড়ুদার দেখতে আমার দুর্দান্ত লাগে। আর ভাল্লাগে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটতে। পায়ের হাওয়াই চপ্পলের একটা ফিতে ছিঁড়ে এসেছে। ভীষণ হাঁটছি। দুধওয়ালা আমাকে এই সক্কাল সক্কাল সাইকেলের বেল দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ঐ বেলটা যেন প্যাক। আজ আমার সাইকেলটা নেই যে। হাঁটতে হাঁটতে সোজা দিনবাজার। তিনটে পুরির দাম ১০টাকা , একহাতা সব্জি ফ্রী। পাশের দোকানটায় পুরির সাইজ একটু বেশি হলেও সংখ্যায় কম দেয়। দুটো। ট্রাকশুটের থাইয়ে হাত মুছতে মুছতে আবারও হাঁটা। এবার সোজা পেপারের দোকান। লাটে লাটে পেপার হকারেরা তুলে নিয়ে যাচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটারের কাছ থেকে। কাগজের দোকানেও শালা হেব্বি লাইন। এত সকালে এত গুলো লোক ঘুম থেকে উঠে পরে রোজ! সুযোগ বুঝে একটা খবরের কাগজ তুলে চোখ বোলাতে শুরু করলাম। দিদি আর মোদীর গল্প। চটাৎ করে একটা রেপের খবর চোখে পড়ে গেলো। খুব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খুঁটিয়ে বর্ননাটা পড়ে পেপার রেখে দিলাম। কি হবে কিনে? বেকার টাকা নষ্ট! ঐ রকম রেপের গল্পতো অঢেল পাওয়া যাচ্ছে পানু সাইটে। আবার হাঁটা। নখটা - দাড়িটা - চুলটা সবই কেমন যেন পেচ্ছাপের মত , বের করে দি আবার হয়। আমার সাথে সাথে তারাও হাঁটে , হাঁটছে , দীর্ঘদিন।
  বারান্দায় একটা বেঞ্চ আছে। তাতে বেশ পুরনো দেওয়াল ঘড়ি খুলে রাখা। অনেকদিন হলো দেহ রেখেছে। বাড়ি ফিরতেই আজ ওদিকে নজর পড়লো। ঘড়িটা দিব্বি প্রান ফিরে পেয়েছে। এরকম তো হওয়ার কথা নয়? ব্যাটারী কে ভরলো? মা তো মামাবাড়ি , বাবাও। ঘড়িটার মর্জি হয়েছে তাই চলবে , ব্যাস! উহুঁ , হবেনা। আমার স্বাভাবিক দর্শনে ছন্দপতন বরদাস্ত করা যাবেনা। আস্তে আস্তে ঘড়িটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যেন এক্ষুনি ওর গলা টিপে ধরবো। হাত দুটো সামনে প্রসারিত। তারপর সেই চুড়ান্ত মুহূর্ত। সালভাদর দালির সেই বিখ্যাত ছবিটা মনে পড়ছে।
    একবার চেয়ার , একবার আরাম কেদারা , একবার মেঝের কার্পেট , টুল , বিছানা , বারান্দা - প্রতিটি জায়গায় বসে বসে দেখে নিচ্ছি। কিছুতেই মনটা ভালো লাগছে না। কিছুক্ষণ জানালার ধার। সময়টা ভেঙে উঠোনে পড়ে আছে। কি অসহায় ভাবে ছড়িয়ে আছে যন্ত্রাংশ গুলো। সাইকেলটা রোদ খাচ্ছে। জামাকাপড় গুলো বড্ড নোংরা হয়ে গেছে। ভ্যাপসা একটা গন্ধ! এতগুলো বই যদি একসাথে হঠাৎ মাথায় পরে তবে নির্ঘাৎ ডিপ্রেশন কাটবে। কিন্তু আমিতো ডিপ্রেশনের সাথেই সহবাস করছি। যত রিপু সব অন্ধভাবে জেগে উঠছে মগজে - কোথাও ঠোকাঠুকি লাগুক। খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা কান্না গলায় পাকিয়ে উঠেও বের করতে পারছিনা। যাদের সাথে শুধুই নাটকের সম্পর্ক তারা রিহার্সালের মত শুধু অভিনয় করে যাচ্ছে যেন। যাদের যাদের যা যা বলেছিলাম তারা স্রেফ এককান দিয়ে ঢুকিয়ে অপর কান দিয়ে বের করেছে। আমি যেন আস্ত চোদ্দ বছরের বনবাসে। এরকমই মনে হচ্ছে। তৎসহ এক পায়ের হাঁটুর সঙ্গে আর এক পায়ের হাঁটু ঠোকাঠুকি লেগে যায়। হাড়ের শব্দ পাচ্ছি। কি কি যেন কাজ ছিল? হ্যাঁ , মনে পড়েছে। এক্ষুনি আমার ডায়েরি গুলোকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ওসব লেখা বড্ড আত্মজৈবনিক আবেগে ঠাসা। না না ব্যাকরণ মারাবো কেন? সহজ বাঙলা হিসেব। বাজে লেখাদের আমার কাছে কোনো স্থান নেই নেই নেই।
   একটা অনন্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বা বলা ভালো যুদ্ধের মত কিছু একটা। কিন্তু যুদ্ধের ঘোড়া আমাদের নেই। আমার খুব প্রিয় যুদ্ধের সিনেমা-নাটক। প্রপ্স গুলো কি অপূর্ব লাগে! ইদানীং আমার যৌন চেতনা নাবালকত্ব পেরোচ্ছে। যেন লেভেল ক্রসিং। যেন ওষুধের দোকানে কন্ডোম চাওয়ার এইতো অপূর্ব সময়। পছন্দের দিদিদের কে ফ্যান্টাসি করে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। সকাল ঘনিষ্ঠ হচ্ছে দুপুরের সাথে আর মাথার ভেতর ভেসে আসছে তবলার বোল। একদম শুরুর বোল , কেউ শিখছে , রিহার্সাল দিচ্ছে বাড়িতে বসে --- " ক তেটে ক তেটে তেরে কেটে তাকো।"                                                              
মাথাটা ফিক্সড করে থেবড়ে বসে আছি। একটু আগে গুচ্ছ গুচ্ছ সারিডন খাবো খাবো ভাবছিলাম। কেন জানিনা একটা ঘোরের তাগিদ অনুভব করছি। খাতাটা বার বার টেনেও যখন কিছুই বমি হচ্ছেনা তখন দ্বিগুণ রাগে ছুড়ে ফেলছি , পাশবিক উল্লাসের মত। যেন ঘোরের বদলে ভর উঠেছে , দিন দুপুরে। তারপর বিকেল উঠে আসে। দার্জিলিং মেল ছাড়ার আগেই উঠতে হবে , সাইরেন শোনা যাচ্ছে , পাঁচটার ট্রেন। সারাদিন ঐ পুরি সব্জি কাহাতক আর। কিছুই লিখতে পারলাম না - পড়তে পারলামনা। যুদ্ধের মাঠে সূর্যাস্ত নেমে আসছে। আমার তো কোনো ঘোড়াই নেই যে তাদের রণক্লান্ত রূপ পরিদর্শন করবো। আমার জন্য শুধু আয়না আছে। যেভাবে কাউকে কথা শোনাতে না পারলেও আমাদের যত রাগ বাড়িতে ঝেড়ে ফেলি , মায়ের ওপর। মা হয়তো আজকাল ভুলেই গেছে আমি মা'কে ভালোবাসি। বাইরের কষ্ট বোধ রাগ হয়ে মায়ের ওপর নেমে আসে। ধুর শালাকবিতা লিখতে গিয়েই যত ফ্যাঁকড়া পোহাতে হচ্ছে। আসলে একটা লেখা লিখতে চাইলে অথচ না নামলে যে অসম্ভব কষ্ট হয় - কোনো পূজা পার্বন নয় - ধূপকাঠির গন্ধ নয় - শুধুই একটা চিন্তা - ঘাম - গন্ধ - আমার মাথা হ্যাঙ হয়ে যাচ্ছে। এবার বেরোতেই হবে বাড়ি ছেড়ে। "সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত সন্ধ্যা আসে" উফ্ গুরু , তোমাকে ভেবেই তো বেঁচে থাকা - যতটুকু বিপ্লব। যেন নিজের অন্ধকারে নিজেই মশার কামড় খাচ্ছি।
   সন্ধ্যাবেলায় যত রঙচঙে মেয়ে। কেউ একটু ওর্না তুলে নিচ্ছে বুকের ওপর - কেউবা শর্টস পড়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে . . . আমার পকেটে সেই দশ টাকা। অবশ্য সাইকেলটা এখন বিট্রে করেনি - দু নম্বর গুমটি তো বাড়ি থেকে খুব দুরে নয়। ১০ টাকায় এক গ্লাস মেরে দিলাম। তারপর ধার - বাকি ... আমার আরোও চাই , চাই চাই চাই! এক্ষুনি তো এক্ষুনিএতক্ষণ পর খুব ভালো লাগছে - চোখের সামনে একটা আঠালো সরের মত ভালো লাগা - দু নম্বর গুমটি পেরিয়ে আমি শ্রীযুক্ত 'আমি' এগিয়ে যাচ্ছি , গলি পেরিয়ে রাস্তা - রাস্তা পেরিয়ে বড় রাস্তা , বড় রাস্তা পেরিয়ে জাতীয় সড়ক --- আহ্ , কি ঘুম পাচ্ছে - সাইকেলটা রেখে দিলাম। পৃথিবীর উপর যেন শুধুই সাইকেল আর আমি - কোনো চাওয়া পাওয়া নেই - কোনো পিছুটান নেই - কোনো ফিলিংস নেই - শুধু দেওয়া আর নেওয়া , আমি প্যাডেল দিচ্ছি ও নিয়ে যাচ্ছে ... সাইকেল টা কোনো রকম স্ট্যান্ড করে কেৎরে শুয়ে পড়লাম রাস্তার পাশে। জাতীয় সড়ক ধরে রাত বাড়লেই লরির দৌরাত্ম্য বাড়ে।
   নির্ভেজাল স্বপ্ন বিহীন ঘুম। তবুও মাঝে মাঝে ফ্রয়েড ভেংচি কেটে চলে যাচ্ছেন। প্রথম কবিতা প্রকাশের দিনগুলো হুহু করে স্বপ্নে জন্ম নিচ্ছে পুনরায় - সেইসব তারিফের মুহূর্ত ... প্রবল হর্নের শব্দ মাঝে মাঝে স্বপ্নে ঢুকে পড়ছে দৈত্যের মত , ফেলে রেখে যাচ্ছে কিছু অমোঘ কোটেশন , আমি দেখতে না পেলেও জানি "চলি বন্ধু আবার দেখা হবে" টাইপ।
    মশার কামড় খেয়েই মদের মত টলে গেছে শরীর , মদ খাওয়ার স্বপ্নও কি অপূর্ব হয়! সন্ধ্যে বেলা স্বপ্ন দেখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আমার সময় হয়ে এসেছে। সারা বাড়িতে কেউ না থাকলেও চোখে জল আসছেনা। কেউ শুনতে পাবেনা , তবুও। এসব অন্য ব্যাপার। আমি কাঁদলে কি আমার গায়ে কোনো ক্লাসিক আলো ফোকাস হবে?
   চুপিচুপি তালা মেরে এলাম দরজার বাইরে। আমি ঘরের ভিতরে থাকলেও আমি বাড়িতে নেই। এ এক মজার খেলা। ছোটবেলায় বাবা মা যখন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতো নাইট শো'এর সিনেমায় - তখনকার দৃশ্যপটও এরকমই ছিল। ঘরের বাইরে তালা ঘরের ভিতর মানুষ। হ্যাঁ , মানুষ। আমি এখনো যে কবিতা লেখার জন্য হাত - পা ছুড়ছি তা আসলে মানুষ বলেই - তা আদতে কোনো শূন্যস্থান পূরনের নেশা। এই নেশা শব্দের আদল বদলে দেয় , মানে বদলে দেয় - আমিও একটা শূন্যস্থানের ভিতর শূন্যস্থান রেখে যাব। প্রবল পাঠকেরা কবিতার সাথে সঙ্গম করে নিতে পারবে তবে। যত দূরেই হোক একদিন ফাঁটিয়ে কবিতা লিখবো বলেইতো নিজেকে বন্দী করে ফেলেছি শূন্যস্থানে ... চারিদিকে শব্দের দেওয়াল - এমন তালার মত দাড়িও দেখা যাচ্ছে। শুধু মাঝখানে কবিতা হাতরাচ্ছি , কখনো বা দড়ি ঝুলিয়ে লক্ষ্য করছি গলার মাপ , কখনো বা চুমু খাচ্ছি আমার প্রিয় ঘুমের ওষুধের প্যাকেট। ঘরের সমস্ত বইগুলো আমাকে লক্ষ্য করছে তীর্যক ভাবে , বেসিক্যালি ঘর থেকে ঘ বাদ দিলে র টুকু পড়ে থাকে তীব্র র হয়ে , আমি র-চা খাইনি মনে পড়ছে বহুদিন , আমার বান্ধবীরা প্রতিদিন দূরত্ব বাড়িয়েছে - আমি হিসেব করেছি আঙুলে আঙুলে --- ত্যারো দিন , ত্যারো তো আনলাকি বরাবর , ত্যারোকে নিয়ে তো কবিতা লেখাও ঠিক নয় , অথচ এ ব্যাপার খানা বেশ বুঝতে পারছি যে আমার মত পাব্লিককে বাঁচিয়ে রাখতে পারে শুধু লেখা ... কিন্তু এই যে এখন লিখতে ইচ্ছে হলেও লেখা আসছেনা একবার নিঃশব্দ হাসছি - কখনো বা কান্নার অভিনয় - চোখমুখ বিকৃতি ... ঘরের বাইরে থেকে একটা পায়ের শব্দ পাচ্ছি। হ্যাঁ , আমার স্টেপিস -ইনকাস - মেলিয়াস- ইউস্টেচিয়ান নালী বাহিত হয়ে এ শব্দ পৌঁছে যাচ্ছে মস্তিষ্কে , খুব ক্ষীণতর শব্দ। গাছের নিজস্ব শব্দ , যা আমরা কোনোদিন শোনার চেষ্টা করিনা। শুকনো পাতা সাথে জোনাকির উড়ে যাওয়ার শব্দ। কেউ গান শিখছে , রাগেশ্রী ইমন-কল্যান এসব সমন্ধে আমার যতটুকু ধারণা তার চেয়ে ভালো লাগাই জরুরী বিষয়। আমি প্রবল নিঃশব্দে জগৎসংসারের শব্দ শোনার চেষ্টা করছি। এত কনসেনট্রেশন আমাকেই চমকে দিচ্ছে মুহুর্মুহু। এই ভাবেই কবিতার উপাদান ছড়িয়ে আছে চারিদিকে , ছড়িয়ে থাকে , প্রতিটি পদক্ষেপে। হয়তো আর কিছুক্ষণ পর সূর্য উঠে পড়বে , সূর্য ওঠারও একটা নিজস্ব শব্দ রয়েছে। তারপর স্বপ্নের ভেতর থেকে কাকার কন্ঠস্বর শুনতে পাবো --- "ওঁ জবা কুসুমশঙ্কর্স্যাম্ কাস্যপেয়ং মা দুত্যিং ধনতারিং সর্বপাপঘ্নম প্রণয়তস্মীদিবাকরম্"                                                                                                                            আর একথাটাও ঠিক যে স্বপ্ন আঁধাখ্যাচড়াই হয়। হ্যাঁ , যার রূপ তুমি খুঁজবে আমি বিমূর্ত সৃষ্টি কর্তা। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে খেলতে রাত্রিগুলোয় স্বপ্ন নেমে এসেছে কুয়াশার মত। একটি দৃশ্যপট --- "  সাদারঙের অন্ধকার। ঝমঝমিয়ে ট্রেন চলে যাচ্ছে। তবুওতো পাখি দেখা গেলো। ভোরবেলার নিঁখুত রিংটোন" , চিত্রকল্প বদলাচ্ছে - " পুরু কুয়াশার ঠান্ডা পুকুর , কলার ডোঙায় এক পা তুলে মুখ গুজে আছে পালকে , হঠাৎ সেই বিষন্ন পাখির চোখে আমার মুখ প্রতিবিম্বিত হয়ে উঠলো" , এটুকুই দৃশ্যমান।  কেননা স্বপ্ন আধাখ্যাচড়াই হয়। আর প্রতিটি স্বপ্নের সাথে কবিতার এক অদ্ভুত যোগাযোগ লক্ষ্য করা যায় , বেসিক্যালি কবিতা একটা স্বপ্নই - যার কোন আকার নেই - অনন্ত... অবশেষে কষ্টের বিরাম ঘটলো। ওহ্ ড্রিম , ক্যান ইউ সি মি? ওহ্ সাউন্ড , ক্যান ইউ হেয়ার মি? ওহ্ পোয়েট্রী , ক্যান ইউ রাইট মি?


No comments:

Post a Comment