।। বাক্‌ ১২০ ।। হাসনাত শোয়েব ।।




ছবি - হাসনাত শোয়েব



হাসনাত শোয়েব মূলত কবি। গদ্য এবং অনুবাদের কাজও করেন কখনো কখনো। জন্ম ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। কাজ করেন স্পোর্টস জার্নালিস্ট হিসেবে। সিস্টেম অফ অ্যাডাওনের অন্ধ ভক্ত শোয়েবের বিশেষ আগ্রহর কমিউজিক এবং স্পোর্টস বিষয়ে। এখন পযন্ত তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালের বইমেলায়মেঘনাদথেকে তার প্রথম কবিতার বই 'সূর্যাস্তগামীমাছ' প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৭ সালে`জেব্রাক্রসিংপ্রকাশ করে দ্বিতীয় কবিতা বইব্রায়ান অ্যাডামস মারমেইড বিষ্যুদবার সর্বশেষ ২০১৮ সালে`জেব্রাক্রসিং থেকে প্রকাশিত হয় তার মেটাফিকশন ধর্মী বই শেফালি কি জানে

দ্য রেইনি সিজন

দুপুর দুপুর
'ইম্যাজিন দেয়ার ইজ নো হেভেন' মেয়ে বলল বাবাকে। সামারভেকেশনে আমরা মাউন্টেন দেখতে যাব। বাবা বলল মেয়েকে। গিজারে গরম পানি দেয়া আছে, দুটি খরগোসের বাচ্চা গোসল করছে। বাবা দেখছে, মেয়ে হাততালি দিচ্ছে।

গুড আফটার নুন
সামার ভেকেশনের আগেই বাবা মরে গেলো। মেয়েএকা একাই মাউন্টেন দেখতে গেলো। সাথে গিজার এবং খরগোসের বাচ্চা দুটি।হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। মেয়েটি ভিজে গেলো।

গুডনাইট
তুমি কি মীন নাকি মেষ? মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো। আমি কন্যা। মেয়েটি হাসলো।অট্টহাসি।তুমি? আমি সিংহ, কিন্তু আমার বাবা মরে গেছে।

জানুয়ারি
পাহাড়ের দিকে শীত নেমে গেছে। পাশাপাশি দুজন মানুষ একে অপরের দিকে না তাকিয়েই হাঁটছে। তারা আঙুল আর ঠোঁট থেকে মুছে নিয়েছে জন্মদাগ। অনেকদূর হাঁটার পর তাদের মনে পড়ে একজন বিষণ্ণ ব্যাজ্জি ওর কথা। অতপর তারা পরস্পরের দিকে ফিরে তাকিয়ে কেউ  কাউকে চিনতে পারলোনা।

জুন
জুন একটি মেয়ের নাম। জুন মাসে পুরুষেরাও ঋতুবতী হয়ে উঠে। দুজন মানুষ, যারা পরস্পরকে চিনতে পারেনি সঙ্গমে জড়ো হয়। সেখানে বিকেলগুলো যেনো আরো বেশি বিকেল।রাতের বেলা যেসব মানুষ ঘুমিয়েপড়ে, ঘুমেই তাদের মৃত্যু ঘটে।

ডিসেম্বর
ডিসেম্বর মাসে ক্যালেন্ডারের অসুখের দিন। মৃত্যু কালে সে হয়তো জুন মাসের সঙ্গমের কথা ভাবে। ক্যালেন্ডারে দাগ টেনে দুটি মানুষ পাশাপাশি শুয়ে আছে। দুটি পাশাপাশি পুরুষ কেউ কাউকে চিনেনা।

ভৈরবী
মা যখন মারা গেলেন তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা।কেবল আজান হচ্ছিলো।আমরা গোল বৃত্ত এঁকে মাকে শুইয়ে দিলাম। সকাল আটটার দিকে জানা গেলো কারো একটা হাত ঘড়ি চুরি গেছে।আমরা আর দেরি না করে জোহরের পর জানাজার সময় নির্ধারণ করলাম।
শ্রী
দুপুরের পর পর সবাই চলে গিয়ে ছিলো। নিতান্ত অভ্যাসবশত আমরা জেনেছি, ঘড়িতে এখনো সময় দেখা যায়। বিকেল চারটা বেজে চল্লিশ মিনিট। আমার মনে পড়ছে, একবার শিব কুমার শুনতে শুনতে মায়ের মৃত্যুর কথা ভেবে কেঁদে ছিলাম। অথচ তখন মা জীবিত। আমার আরো একবার শিব কুমার শোনার ইচ্ছা তীব্র হলো।

মালকোষ
যদি বৃষ্টি হয়, তবে কি রেইনিসিজন? রেইনিসিজন মানে গামবুট, রেইনকোট, ছাতা এবং মেঘ মল্লার, মা বলেছিল।আমি তখন বুঝিনি, রেইনি সিজন মানে কারো কারো জন্য মৃত্যুও হয়।রাত দুইটা একুশ।আমার মনে হলো, বর্ষাকালেই সবচেয়ে বেশি মায়ের মৃত্যু হয়।

আমি
'আরেক দিন এসে চা খেয়ে যাব' নিজের সাথে এই ছিলো আমার শেষকথা। রক কনসার্টের হেড ব্যাঙ্গিংয়ের কারণে যাদের স্পাইনাল কর্ড বেঁকে গিয়েছিল তাদের একজন হিসেবেও আমার নাম খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তবে আমার পকেটে এখনো মাঝারি মানের একটি তরমুজ ও পেট্রোলিয়াম জেলির খালি কৌটো আপনি খুঁজে পেতে পারেন। যদি পান তবে আমার নতুন ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েন। ৪৫৪, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, হাতিরপুল, ঢাকা।

তুমি
তবে নিশ্চয় তুমি দানিয়েলের অল্টারইগো। তোমার রেইন ফল প্রীতির কথা আমি জানি। সেটি অবশ্য তুমিনও।তোমাকে যে বাঘ বলে ডাকা হয় সেটিও তুমি নও। তুমি একবার বলেছিলে, তুমি জানলে আমাকে জানাইও।আমি জেনে ছিলাম, চকলেট রঙের হাওয়াই গাড়ি; সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দ্রুত চলে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে।
সে
আমি এবং তুমির গ্রাফিতি হলো সে। সে মানে লুকিং গ্লাসে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠা একটি মুখ।হলি রেজাকরেকশনের পর আমাদের তুমুল আকাঙ্ক্ষা।তার একুশত মনা মহবেজুনমাসের রেইনিসিজন

ফ্লোরিডা
পৃথিবীর বিষণ্ন তম শহরের নাম ফ্লোরিডা। আমি দেখিনি যদিও, মনে হয়। আচ্ছা, ডোনাল্ড ট্রাম্প জেতার পর ফ্লোরিডার বিষণ্নতা কি খানিকটা কমেছে? তার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান গুলো কি মেলানিয়াকে স্বপ্নে দেখতে শুরু করেছে? আমি জানিনা।তবে জানি, হঠাৎ শহরটির বাগানে গোলাপ ফুটতে শুরু করেছে।

কাঠমান্ডু
তুমি বলেছিলে, কাঠমান্ডু অনায়সে পৃথিবীর রাজধানী হতে পারতো। সে শহরের নারীরা সবচেয়ে বেশি যৌনাবেদনময়ী। তাদের ব্রেসিয়ারের নিচে সভ্যতার ইতিহাস লেখা আছে। যেকোন মঙ্গলবার সূর্যাস্তের সময় তাদের ছুঁয়ে দিলে, পৃথিবীর বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা শতভাগ।

ইস্তাম্বুল
ইস্তাম্বুল শহরে আমার কাছের কেউ নেই। তবুও প্রতি এপ্রিলে আমার জন্য চিঠি আসে। মিশরীয় ভাষার কিছুই আমি বুঝিনা।তবুও মনখারাপ থাকলে বের করে দেখি। যেহেতু পড়তে পারিনা, তাই দেখি। আমার ভালো লাগে।

মা
নি আমার বন্ধু ছিল। আমি জানতামনা বাবানিকেচিনত।তার সোনালি চুল ঘাড় পর্যন্ত বেণী করা থাকতো। তার মলিন ওভার কোটে প্রতিদিন একটি করে চিঠি রেখে দিত বাবা। যেখানে একটি ফলের ছবি আঁকা থাকতো। যার নাম আমার জানা ছিলনা। দুপুর বেলানির ত্বকে প্রতিফলিত হতো সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি। আমি তাকে প্রচণ্ড ঈর্ষা করতাম।একদিন তাকে নিয়ে বাবা সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলো, সেদিন জানতে পেরে ছিলাম নি আমার মা।

বাবা
সাধারণত রিকার্ডোকে বাবা বলেই ডাকতাম। ঈশ্বরের দাঁত পাওয়ার শর্তে ফাদার ফ্ল্যামিঙ্গোকে বাবা বলে ডাকতে শুরু করেছিলাম। রিকার্ডোকে ডাকতে শুরু করলাম ফাদার বলে। এরপর থেকে বাবাকে দেখতাম চার্চে গিয়ে ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে প্রার্র্থনা করছেন।ফ্ল্যামিঙ্গো প্রায় বাসায় আসতে শুরু করলো।ধীরে ধীরে ভুলেই গেলাম রিকার্ডো আমার বাবা।প্রতিরাতে ফ্ল্যামিঙ্গো আমাদের জন্য নিয়ে আসতো ঈশ্বরের রূপালি দাঁত।

সন্তান
আমার মায়ের নাম নি এবং বাবা ফ্ল্যামিঙ্গো।

সামার
দুপুর গুলো এলোমেলো পড়ে আছে। তার ওপর শুয়ে আছে কয়েকটা কুকুর। একটির নাম জেনেলিয়া।এই নাম ধরে ডাকলে সে তাকায়। আরেকটির নাম সামার।ডাকলে সে সাড়া দেয়না।আরো জড়ো হয়ে বসে।দুপুর গড়াতে শুরু করেছে; জেনেলিয়া পালিয়ে গেছে।সামারের ছায়া ক্রমশ বড় হতে শুরু করেছে।

অটাম
সে্ ক্যালেন্ডার উল্টিয়ে যাচ্ছে একা একা। হেমন্ত মাস খুঁজে পাচ্ছেনা।সান্তিয়াগোর রাস্তাগুলো এখনো তুষারাবৃত।অথচ আমরা কেউই হেমন্ত মাস খুঁজে পাচ্ছিনা। রেডি ওর সতর্কবার্তা, হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা।সে তবুও ক্যালেন্ডার উল্টিয়ে যাচ্ছে একা একা।

উইন্টার
উইন্টার মানে শীত, জানার পর থেকে উইন্টার আমার প্রিয়। উইন্টারে গাছের পাতা ক্রমশ ছোট হতে শুরু করে।এ সময় জেনেলিয়াও সামার কাছাকাছি আসে।তারা জানেনা, দীর্ঘ  শীতের পর পাতা গুলো কেবল বিষণ্ন বোধ করবে।

ছ্যামা
বাবা দেওয়ানা হচ্ছেন। তার উড়ন্ত চুল হাওয়ায় আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। মধ্যরাত সঙ্গমও বৃষ্টির। সেই রাত ভাঙছে। হারমোনিয়ামের রিডে ঝড় তুলছেন সাগরেদ।ঝিকির তুলছে পাতা থেকে পতঙ্গ। তুমি জানো, এভাবেই প্রতি রাতে মানুষ মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়। আগুন থেকে আলাদা করে রাখে বাতাসকে।

কনসার্ট
আর্মেনিয়ার শান্ত তরুণেরা ফিরতে শুরু করেছে।তাদের এক হাতে কালাশনিকভ, অন্য হাত উঁচিয়ে ধরেছে ডেভিলসহর্ন। মওলা আপনি বিশ্বাস করুন, পৃথিবীতে কনসার্টে উপস্থিত দর্শকেরাই কেবল নিষ্পাপ। হেড ব্যাঙ্গিংয়ে তারা জড়ো করে পৃথিবীর যাবতীয় মদ ও খাবার।আপনি সদয়হোন ! শান্তি বর্ষণ করুন তাদের প্রতি !

আসর
উৎসব শেষে জাগতে শুরু করেছে শান্ত পুরুষেরা।আর্মেনিয়ান সিমেট্রিতে শুরু হয়েছে আরো একটি ছ্যামা-কনসার্টের প্রস্তুতি।

ফার্গি, তোমার জন্য শোক
স্যার ফার্গি,  ওল্ড ট্রাফোর্ডের জন্য আপনার কষ্ট হয়না? আমাদের জুতার ওপর লেখা থাকতো ম্যানচেস্টার। ভাবতাম এক লোমশ ভালুকের কথা যে প্রতিদিন আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। একটা গাছের কাছে এসে সে থেমে যেত। তারপর চিৎকার করে কাঁদতো। আমি স্বপ্ন দেখতাম ফার্গি, গভীর অসুখ নিয়ে একটা হরিণ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে।

ফোর হান্ড্রেডনট আউট
গায়ানার জঙ্গল থেকে খুব বেশি দূরে নয়। কোকোবিন গাছের ধারে বান্টিদের বাড়ি। যেখানে বিকেল গুলো বরাবরই রুক্ষ এবং হিংস্র। রাস্তার ধারে ধারে থাকে বাঘের থাবা আর জিরাফের কংকাল। তিনদিন ধরে লনে বসে রেডিও 'রনব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফ্ল্যাটারিং স্কোর গুনছে জেমি। সান্তাক্রুজের একমাত্র সোনালি পুরুষ এখনো বাড়ি ফেরেনি। একটু আগেই রেডিও সূত্রে জানা গেছে এন্টি গারেজারেকশনে তুমুল ঝড়ের কথা।আর বিগস্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ফোর হান্ড্রেডনট আউট।

দ্য ডিভাইন পনিটেল
তোমার পনিটেলে ক্রুশ বিদ্ধ জেসাসের মুখ। তোমার মুখ পানাম নগরীর ধ্বংসাব শেষ। ব্যাজ্জো, রোজ বোলের কার্নিভালে এখনো তোমার জন্য শোক গাথা পাঠ হয়।তুমি কিজানো, পৃথিবীতে এক সময় মানুষেরা শিশু হয়ে জন্মাত। তাদের প্রার্থনায় তোমার নাম উচ্চারিত হতো।টি-শার্টে লেখা থাকতো, বিংশ শতাব্দীর শেষ ক্রুশবিদ্ধ জেসাস।


১৮
গাছ
গাছের বিস্মরণ আমিও জানি! শিকড় ছড়িয়ে সে তাস খেলে।তার মুখের ওপর হেঁটে যাওয়া পাতা, সে কেবলই সরিয়ে দিতে চায়।পাতার যন্ত্রণা খুঁটিয়ে দেখে পাতা।গাছ জানে, মুখ থেকে সরে যাবে পাতা।মুখের ওপর হেঁটে যাবে তাদের লাশ।জেনেসিসের ড্রাকুলারাও একে একে বের হবে সেদিন।

পাতা
এবার মুছে দিতে পার শিকড় বিষয়ক রহস্য। আমাদের আছে ঔষধিগাছ, চিকিংসা বিজ্ঞান ও মিথ্যা অহংকার।আঙুর গাছের নিচে জমা হোক প্রার্থনার হাঁস।তুমি আসি ও তবে শেষ ভোজ সভায়।

বিশ্বাস
এখন চামড়া বদলানোর মৌসুম। আমরা জ্বর নিয়ে অপেক্ষা  করছি অবিশ্বাসী পাতাদের জন্য।


No comments:

Post a Comment