।। বাক্‌ ১২০ ।। ওবায়েদ আকাশ ।।






ওবায়েদ আকাশ : দেখা যাচ্ছে আপনার সাম্প্রতিক কবিতাগুলো আকৃতিতে ছোটো, এবং মনে হয় আরও
কী যেন বলার আছে, অথচ আপনি না বলে ছেড়ে দিচ্ছেনএটা কি বার্ধক্যের কারণে, নাকি ইচ্ছাকৃত?
উৎপলকুমার বসু : বার্ধক্য তো একটা প্রধান কারণ বটেই
ওবায়েদ আকাশ : আমার তো মনে হয় আপনি এক্সপেরিমেন্ট করছেন?
উৎপলকুমার বসু : দেখো, আমি আমার লেখালেখি সম্বন্ধে বলতে একদম অক্ষমএর রসায়নটা কী,
সেটা আমি বলতে পারবো না
ওবায়েদ আকাশ : নিজের লেখা সম্বন্ধে আমাদের দেশে অনেকে আত্মপ্রশংসামূলক কথা বলেন বা
লেখালেখি করেন; এমনকি বিনয় মজুমদারও তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার এবং লেখালেখিতে আত্মপ্রশংসা
করেছেনএটাকে আপনি কী চোখে দেখেন?
উৎপলকুমার বসু : আমার মনোজগতের বাইরে এগুলোএগুলো সম্বন্ধে আমি কোনো মন্তব্য করতে
পারবো নাযদি এটা করে থাকেন বিনয়ের মতো কবি, সেটার পেছনে একটা কারণ আছে বোধ হয়,
সেটা নিছক আত্মপ্রশংসা নয় সম্ভবত, আমি জানি না ঠিক
ওবায়েদ আকাশ : আপনার কবিতার আলাদা একটা স্বর আছেশব্দ ব্যবহার এবং উপস্থাপনায় একটা
বিভিন্নতা আছেলেখার আগে-পরে হয়তো অনেকের লেখাই পড়ে থাকেন, সেই প্রভাব কীভাবে কাটিয়ে
ওঠেন?
উৎপলকুমার বসু : দেখো, যে যখন কবিতা লেখে, তার আগেও কেউ নেই, পেছনেও কেউ নেইসে
একা লেখেকিন্তু তার একটা বিশাল অবচেতন মন রয়েছেসেই অবচেতন মনে কে কী কনট্রিবিউট
করেছে, সেটা বলা মুশকিলমনস্তাত্ত্বিকরা বলেন, যৌথ অবচেতন বলে একটা কথা আছেযেমন, আমি
কখনো বরফ পড়া দেখিনিকিন্তু আমার যৌথ অবচেতন মনে বরফ পড়ার স্মৃতি রয়েছেহয়তো হাজার
হাজার বছর আগে আমার পূর্বপুরুষ বরফ পড়া দেখেছে, কানেকটিকাট কনশাসে রয়ে গেছেতো কে কী
কার কাছ থেকে পেয়েছি, সেটা বলা মুশকিলআর আমি মূলত যেটা করি, অনেক সময় আমি কবিতায়
খণ্ড ইমেজারি ব্যবহার করিএকটা ইমেজকে আমি কমপিট করি নাএটার একটা কারণ হলো, আমার
পাঠকের ওপর আমার গভীর বিশ্বাসআমার ধারণা, বাকি অর্ধেকটা পাঠক নিজেই পূর্ণ করে নেবে
আমার লেখা কেউ মানসিকভাবে সক্রিয় হবে এটা হয় না, তাকে কিছু না কিছু দিতে হবে
ওবায়েদ আকাশ : আপনার অধিকাংশ কবিতায় দেখা যায় বিষয়ের কোনো পারম্পর্য নাইকবিতায়
পারম্পর্য থাকাটা কি কোনো শর্ত, নাকি পারম্পর্য না থাকাটা একটা বৈশিষ্ট্য?
উৎপলকুমার বসু : এই যে তুমি সারাদিন কাটাও, তার কী কোনো পারম্পর্য আছে? এই যে এখন আমরা
ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছি, গল্প করছি, এর পর কে আমরা কোথায় যাবো, তার কি কোনো পারম্পর্য আছে?
এটা তো উন্মাদের জগত
ওবায়েদ আকাশ : বাংলাদেশে যে তরুণরা এখন মূলধারায় লেখালেখি করছে, তাদের মধ্যে তো আপনি
ব্যপকভাবে জনপ্রিয়, কখনো কি ভাবেন কেন তারা আপনার কবিতা এত পছন্দ করে?
উৎপলকুমার বসু : তোমার এই উক্তির মধ্যে সন্দেহ আছেআমি যে জিনিস লিখি, সেটা কোনোদিন
জনপ্রিয় হতে পারে নাকিছু কিছু লোকের মনের গভীরে প্রবেশ করতে পারে
ওবায়েদ আকাশ : জনপ্রিয় ঠিক নয়, তরুণ কবিতাকর্মীদের মধ্যে প্রিয়
উৎপলকুমার বসু : হ্যাঁ, সেটা সম্ভবএর কারণ হলো, আমরা মনে হয় একই মনোজগতের অধিবাসী
এবং কলকাতায় অনেকে ঠাট্টা করে বলে যে, আমি নিজে এত কবি সৃষ্টি করেছি, যদি অভিযোগ করা হয়,
বাংলায় এত কবি কেন, তাহলে নাকি আমাকেই  কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবেতবে এটা খুবই গৌরবের
কথা, কবিতা যিনি লিখবেন তিনি এত বেশি স্বাধীনতাকামী, সত্যি কথা বলতে কী, যারা ফিল্ম করেন, ছবি
আঁকেন, তাদেরও একটা পিছুটান আছে-- আমাকে ভাবতে হবে আমার ছবি বিক্রি  হবে কিনা, আমার
ফিল্ম কে দেখবে এসব আর কীকিন্তু কবিরা এদিকটায় একদম ঢুকতে চায় নাআমি কি জানি না
কীভাবে বিখ্যাত হওয়া যায়, খুব ভালোভাবেই জানিকিন্তু আমি তা চাই নাএটা আমার একটা
গোয়ার্তুমি বলতে পারোএটা আমার ঘাড় বাঁকা কথা বলতে পারো
ওবায়েদ আকাশ : চৈত্রে রচিত কবিতাআপনার প্রথম কবিতার বইআপনি বলেছেন, এটা আপনার
স্কুল জীবনে লেখাএ বইটি বের করার অভিজ্ঞতা এবং লেখালেখির শুরুর পর্বের অভিজ্ঞতা আমাদের
বলবেন?
উৎপলকুমার বসু : তুমি যেটা জানতে চাচ্ছ, সেটা তো প্রস্তর যুগের কথাতুমি আমাকে প্রস্তর যুগ সম্বন্ধে
বলতে বলছোএত কী আর স্মৃতিতে আছে, কীভাবে শুরু করলামওই সব একসঙ্গে আড্ডা দিতাম
চৈত্রে রচিত কবিতার প্রকাশক হচ্ছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়এবং আমরা সবাই খুব টিউশনি-ফিউশনি
করতাম, করে পয়সা রোজগার করতামতার থেকে বই বেরুত, কৃত্তিবাস পত্রিকা বেরুতএইভাবে
লেখা আর কী
ওবায়েদ আকাশ : তখন কারা কারা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন?
উৎপলকুমার বসু : আমার খুব বন্ধু ছিলেন, এখন তিনি অত লেখেন না, আনন্দ বাগচী, সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়, দীপক মজুমদার, পরে এসছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শরৎকুমার
মুখোপাধ্যায়... এরা কয়েক বছর পরে এসছেন
ওবায়েদ আকাশ : আপনি কি শুরু থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক কাগজগুলোতে লিখতে শুরু করেন, নাকি প্র ম
প্র ম আপনিও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন?
উৎপলকুমার বসু : প্রতিষ্ঠানবিরোধী কী বলবোলোভ কি হয় না, একটা বড় কাগজে লিখি? কনফিউশন,
কনফিউশনআমি একবার দেশ পুজো সংখ্যায় লেখা পাঠিয়েছিলাম১৯৫৩ সালতো সেটা ছাপাও
হয়ে গেলএকপাশে জীবনানন্দ দাশ, একপাশে বুদ্ধদেব বসু, আর পায়ের নিচে পাঁচ ছলাইনের আমার
একটি কবিতাকবিতাটা ছাপিয়েছিল নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আমাকে আনন্দ বুঝালো, কাগজটা অফিসে
গিয়ে নিয়ে আসতে হবে, তা না হলে হাতে পেতে দেরি হবেতো আমি গেলাম, নীরেন দা আমাকে
কাগজটা দিলেনআর বললেন, টাকাটা মাসখানেক পরে মানি অর্ডারে যাবে বাড়িতেআমি খুব ঘাবড়ে
গেলামআমার প্রথম সমস্যা হলো, আমার বাড়িতে কেউ লেখালেখি করে না, আর আমি পড়ি সায়েন্স
আমি কবিতা লিখছি শুনলে, বাড়িতে একটা বিপব হয়ে যাবেআমি, আমার বাবা আর বোন একসঙ্গে
থাকতামআমি আমার বোনকে বললাম, এরকম মাসখানেক পর এক লোক কিছু টাকা নিয়ে আসবে,
তুই সই করে টাকাটা নিয়ে নিসবাবা যেন না দেখেহায়, এমনই কপাল যে, পোস্টম্যান গিয়ে বাবার
কাছেই ওটা দিয়েছেলেখা থাকে না, দেশ পত্রিকার অতো তারিখে, লেখা ছাপা হওয়ার সম্মানী বাবদ
এত টাকা, তো এটা পড়ে বাবা বললেন, তুই কী লিখেছিস, আন তো দেখি পত্রিকাটা, তুই কী লিখেছিস!
আমার বোন আবার বলছে, বাবা, দাদা যা করেছে, ঠিকই করেছে, তাতে তোমার কী? তবু বাবা বলে, না
দেখি ও কী লিখেছেআমি তখন ফার্স্ট ইয়ারে না সেকেন্ড ইয়ারে পড়িআমাদের বাড়িতে বাবার বয়সী
কয়েকজন লোক ছিলেনএকজনের নাম ফটিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়তাকে দেখিয়েছিলামতিনি পড়ে
বললেন, আমি এর কিছুই বুঝলাম নাকিছুদিন আগে আমি নিরেন দা কে বলেছিলাম, দাদা দেশে যে
আমার পাঁচ-ছলাইনের একটা কবিতা ছাপিয়েছিলেন, জায়গাটা খালি ছিল বলে ছাপিয়েছিলেননিরেন
দা আমাকে বললেন যে, না, দেশ-এ সেরকম হয় নাসেবার আমি আরেকটা লেখা পাঠিয়েছিলাম পূর্বাশা
কাগজেসঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদক ছিলেন, সেটা ছাপা হয়েছিলতো সেই আমি লাস্ট লেখা পাঠিয়েছি
মানে অনাহূত লেখা পাঠিয়েছিপূর্বাশার একটা কপি নিয়ে পূর্বাশার অফিসে গেলাম, সেখানে দেখি সঞ্জয়
বাবু খালি গায়ে বসে আছেন টেবিলের ওপরতখন সকাল সাড়ে এগারোটা বারোটাগ্রেট ম্যানতিনি
আমাকে আমার কবিতা থেকে ব্যাখ্যা করে শোনালেনআমি তো স্তম্ভিতকবিতাটায় জীবনানন্দ প্রভাব
ছিলবিদিশা-টিদিশা এসব ছিলতো উনি আমাকে বললেন, তুমি যে বিদিশা লিখেছো, জানো তো এর
ইতিহাস কী? উনি আমাকে বিদিশার ওপর একটা লেকচার দিলেনবিম্বিশা আমাকে বোঝালেন, আমি
তো অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছি, আমি কিছুই জানি নানা জেনেই এগুলো ঢুকিয়ে দিয়েছিতারপর সঞ্জয়দা
আমাকে বললেন, তোমাকে পূর্বাশার জন্য একটা কাজ করতে হইবোআমি বললাম, কী কাজ? বললেন,
ঐ আলমারিতে যাও ওখানে লুইস ম্যাকনীসের একটা কবিতার বই আছে, ওইটা অনুবাদ করতে হইবো
আমি বইটা পেড়ে দেখি ইংরেজি কবিতা, তার ওপর অন্ত্যমিল দেয়া কবিতাচার লাইন চার লাইন করে
তিনি ভারতবর্ষে বেড়াতে এসে মহাভারত পড়ে অভিভূত হয়ে লিখেছিলেন, একটাই কবিতা, দীর্ঘ কবিতা
একটা বইদেখে আমি ভাবলাম, বিপদে পড়েছি, লেখালেখি ছেড়ে দেব ঠিক করেছিএ সব করতে
হলে তো গেছিআমি বললাম যে, এ আমারে দিয়া হইবো নাউনি বললেন, না তুমি পারবেআমার
একটা সুবিধা হলো, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, সবাই মনে করতো, আমার লেখালেখি কোনো ব্যাপার না
টুকটাক লিখছে, এসব থাকবে নাআমি এর সুযোগ নিলামসঞ্জয়দাকে বললাম যে, দেখুন, আমি
সায়েন্স পড়ি, আমি অত ভালো ইংরেজি জানি নাতখনকার দিনে সায়েন্স তো পড়তো বোকারাভালো
ছাত্ররা ইংরেজি, , ইকোনোমিক্স পড়তোতারপরও উনি আমাকে দিলেনপূর্বাশা ত্রৈমাসিক কাগজ
বললেন, তিন মাস সময় আছেআমি বাড়িতে বাড়িতে নিয়ে এলামউল্টেপাল্টে দেখলামতারপর,
২/৩ মাস পর যথারীতি ফেরত দিয়ে বললাম, আমাকে দিয়ে হবে নাআমাকে খুব ভালোবাসতেন
সঞ্জয়দাখুবআমাকে আর তারাপদ রায়কে ভালোবাসতেনআমাদের দুজনকে অসম্ভব
ভালোবাসতেনআর আমিও সঞ্জয় বাবুর একেবারে চ্যালা ছিলামসঞ্জয় বাবু আমাকে একবার
বুঝিয়েছিলেন, গল্পটা আমি অনেককে শুনিয়েছি, বুঝিয়েছিলেন, সভ্যতার শুরু হচ্ছে কুমল্লা থেকেআর্যরা
কুমিলার লোক, কুমিলা থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছেআমরা চিরদিন শুনেছি যে, মধ্য এশিয়া থেকে
আর্যরা ভারতবর্ষে এসছে, উনি তার পুরো উল্টোআমাকে বলতো কুমিলা কথাটার মানে কী কও তো?
কুমিলা হইলো কুর্মআর ইলোকুর্ম মানে কচ্ছপ, আর ইলো মানে জলজল থেকে কচ্ছপ ভাইসা
উঠলোআর কচ্ছপের পিঠে সভ্যতা ভাইসা উঠলোএক অদ্ভুত পাগল লোক ছিলেন সঞ্জয় দাপ্রতিদিন
সন্ধ্যায় এরকম এক একটা গল্প শোনাতেনসঞ্জয়দা বাংলাদেশের কুমিলার লোক ছিলেন
[সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে এ রকম মাখামাখির সময় উৎপলকুমার বসু মাত্র ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রতিনি
ভূতত্ত্বে এমএসসি ডিগ্রি নেওয়ার পর কলকাতার আশুতোষ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেনএরই মধ্যে
চালিয়ে যান লেখালেখি১৯৬৪ সালে কলকাতা ছেড়ে চলে যান বিলেতে৬৪ সাল পর্যন্ত উৎপলের
প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা মাত্র দুটিচৈত্রে রচিত কবিতাএবং পুরী সিরিজ১৯৭৮ সালে ফিরে আসেন
বিলেত থেকেতার দুটি গদ্যের বই নরখাদকপ্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে, এবং ধূসর আতাগাছ
প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালেতার অন্যান্য কবিতার বই আবার পুরী সিরিজ/১৯৭৮, লোচনদাস
কারিগর/১৯৮২, খণ্ডবৈচিত্র্যের দিন/১৯৮৬, শ্রেষ্ঠ কবিতা/১৯৯১ এবং সালমা-জরির কাজপ্রকাশিত হয়
১৯৯৫ সালেএরপর গত ১১ বছরে উৎপলকুমার বসু লিখেছেন অনেকএ সময়ের ক্ষুদ্রাকৃতির
কাব্যগ্রন্থগুলো শরীরচিহ্ন, কহবতীর নাচ, নাইটস্কুল, টুসু আমার চিন্তামণি, মীনযুদ্ধ, বক্সীগঞ্জে পদ্মাপারে,
তীর্থ ও উদ্যান, সুখ-দুঃখের সাথীদীর্ঘ ১৪ বছরের প্রবাস জীবনে উৎপলকুমার বসু লেখালেখি প্রায়
ছেড়েই দিয়েছিলেননানা প্রকার অলেখক সুলভ কাজকর্মেই কেটেছে তার প্রবাস দিনগুলিদেশে ফিরে
এখন তিনি পুরো মাত্রায় এক লেখক হলেও, তার সমসাময়িকদের তুলনায় তার রচনা সম্ভারের
পরিমাণ ভয়াবহ রকমই কমএজন্য তার কোনো অনুশোচনা, দুঃখ, আফসোস কিছুই যেন নেইআর এ
জন্য হয়তো তিনি তার কবিতা সংগ্রহের ভূমিকায় বুঝি মজা করেই লিখেছেন, ‘যে-সামান্য কবিখ্যাতিটুকু
আমার আছে তার অন্যতম কারণ হয়তো এই যে আমার বইগুলি দু®প্রাপ্যউৎপলকুমার বসু জন্মগ্রহণ
করেন ১৯৩৭ সালে, কলকাতার ভবানীপুরেবর্তমান বাস কলকাতার গড়িয়াহাটে, মেঘমল্লারের ফ্ল্যাটে।]
ওবায়েদ আকাশ : কলকাতায় ফিরে এলেন ১৯৭৮ সালে, এর মধ্যে প্রচুর লোখালেখি করেছেনআপনার
বেশ কটি বই বেরিয়েছেআবার কীভাবে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে গেলেন?
উৎপলকুমার বসু : কে বলেছে তোমাকে আবার মিলে গেছি? আমার বই বেরিয়েছে, বলতে পারো আমার
বন্ধুভাগ্য খুব ভালোএটা একটা কারণআর একটা কারণ হলো, আমার মধ্যে কোনো স্বার্থের ধান্দা
নেইআমি যে বিলেতে গেলাম, আমার এক বন্ধুই আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল
ওবায়েদ আকাশ : কলকাতার জীবন আর বিলেতের জীবনের মধ্যে কেমন পার্থক্য মনে হয় আপনার?
কলকাতায়ই ভালো আছেন, নাকি বিলেতেই ভালো ছিলেন?
উৎপলকুমার বসু : কলকাতায়ই ভালো আছিবংলাদেশে এসে আরো ভালো আছিকথাটা একদম আন্তরিকভাবে বলছি
ওবায়েদ আকাশ : বাংলাদেশের কবিদের কবিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
উৎপলকুমার বসু : সত্যি কথা বলতে কী, তোমরা যারা লিখছো, তোমাদের প্রজন্মের কবিদের মধ্যে
একটা আইডেন্টিটি খোঁজার প্রবণতা আমি লক্ষ্য করছি
ওবায়েদ আকাশ : সম্প্রতি কবিতা পাক্ষিক থেকে প্রভাত চৌধুরী সম্পাদিত পোস্টমডার্ন বাংলা কবিতা
নামে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে যেখানে আপনার কিছু কবিতা ঠাঁই পেয়েছেনিজেকে কি
পোস্টমডার্ন কবি দাবি করেন?
উৎপলকুমার বসু : সেটা প্রভাত চৌধুরী কী বলে, হা... হা... হা...
ওবায়েদ আকাশ : সেখানে আবার জীবনানন্দ দাশের কবিতাও কিন্তু নিয়েছেন
উৎপলকুমার বসু : ভারতচন্দ্রও নিতে পারতএগুলো সব
ওবায়েদ আকাশ : পোস্টমডার্নিজম নিয়ে এই যে হট্টগোল, আপনি কী ভাবেন?
উৎপলকুমার বসু : পোস্টমডার্নিজম নিয়ে কিছু তাড়না তৈরি হয়েছিল, কিন্তু নাইন ইলেভেনের পর তার
সবকিছু স্তিমিত হয়ে গেছে
ওবায়েদ আকাশ : কী রকম তাড়না তৈরি হয়েছিল?
উৎপলকুমার বসু : না কতগুলো জিনিস আছে, যেমন মডার্নিজম যে জিনিসগুলোকে প্রমোট করতো,
সেগুলোকে অস্বীকার করেছে, যেমন মডার্নিজমে পরিবেশ সম্পর্কে কোন চিন্তাই ছিল না, মডার্নিজমের
একটা অভিপ্রায়ও ছিল যে পরিবেশকে লুটেপুটে খাওযার কারণে আমাদের নদীগুলোতে কিছু বাঁধটাধ
তৈরি হয়েছেপোস্টমডার্নিস্টরা প্র ম এ সম্বন্ধে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেমডার্নিস্টরাও অবশ্য
কেউ কেউ বলেছে; তবে কথা হলো যে, ব্যাপকভাবে পরিবেশের সঙ্গে সহাবস্থান না করলে তো আর হবে
না
ওবায়েদ আকাশ : পোস্টমডার্নিজমের মূল কনসেপ্টটাই শেকড়ে ফিরে যাওয়া এমন কিছু ধারণা করে
বেশ হইহট্টগোল চলেছে কিছুদিন
উৎপলকুমার বসু : শেকড়ে ফিরে যাওয়ার মানেটা কী? মানে তুমি ট্রাডিশনাল নলেজের কাছ থেকে শেকড়
গ্রহণ করোমডার্নিস্টরা তা করে নামডার্নিস্ট নলেজ হচ্ছে অত্যন্ত করাপ্ট, অত্যন্ত আন-ব্যালান্সড,
অত্যন্ত ক্ষতিকারকশুধু তোমার প্রজন্ম নয়, তোমার পরের প্রজন্ম, তার পরের প্রজন্ম বিশাল ক্ষতিকারক
রাস্তায়তৈরি প্রকৃতি পরিবেশ আত্মীয়স্বজন এদের সঙ্গে হারমনিটা না থাকতে পারে, এক রক্তের, এক...
ওবায়েদ আকাশ : কেবল সাহিত্য কিংবা চিত্রকলার ক্ষেত্রেই নয়, কনসেপ্টটা কিন্তু আমাদের
পরিবারনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই...
উৎপলকুমার বসু : হ্যাঁ, সব সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য
ওবায়েদ আকাশ : আমরা কি ধরে নেব এটা মডার্নিজম পরবর্তী একটা সময়ের শুরু, নাকি একটি ধারণা
যার কোনো শুরু বা শেষ সময় বলতে কিছু নেই?
উৎপলকুমার বসু : মডার্নিজম পরবর্তী সময় এটা ইউরোপের কনটেক্সটে বলা যায়, বাংলাদেশের বেলায়
কিন্তু নয়আমি কয়েক বছর লন্ডনে কাটিয়ে এসেছি, সেখানে কিন্তু এটা ওদের সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে
গেছেএখন কিন্তু ওখানে কারো পক্ষে সম্ভব নয় একটা গাছ কেটে ফেলাওটা একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার
হয়ে দাঁড়াবেশুধু ইউরোপ বলে না, আমি তুরস্কে গিয়ে দেখেছি, ওরা একটা গাছকে কী যত্ন করে রাখে,
ভাবা যায় নাতুরস্কের একটা গল্প বলি-- আমি একদিন হাঁটছি একটা পার্কের মধ্যে দিয়ে, বিশাল পার্ক,
শহরের মধ্যে, হঠাৎ আমার গায়ের ওপর একটা ফল এসে পড়ল, আমি সেটা তুলে নিয়ে ভেঙে দেখছি
এটা কী ফল, তো আমার পাশ দিয়ে এক ভদ্রলোক যাচ্ছিলেন, উনি দেখে ইংরেজিতে বললেন, ওখানে
তো বেশি ইংরেজি বলে না, উনি ইংরেজিতে বললেনডোন্ট ইট ইট. উনি হয়তো ভেবেছেন, আমরা
ভারতীয় তো, ক্ষুধার্ত, ক্ষুধার যন্ত্রণায় ওটা আবার খেয়ে ফেলতে পারিতো আমি ওনাকে বললাম,
ডযু? উনি আমাকে বললেন, এটা বিষ, সত্য মিথ্যা জানি না, তবে উনি আমাকে
ভয় দেখিয়ে গেলেন
ওবায়েদ আকাশ : পোস্টমডার্ন বাংলা কবিতা সংকলনে কিছু শর্তের উল্লখ আছে-- যে শর্তগুলো পড়লে
বিভাজন করা যাবে কোনটি পোস্টমডার্ন কবিতা কোনটি নয়--
উৎপলকুমার বসু : কবি হিসাবে আমার প্রথম কাজই হচ্ছে ঐ শর্তগুলো ভেঙে দেয়া
ওবায়েদ আকাশ : তাহলে ঐ সংকলনে আপনার যে কবিতাগুলো ঠাঁই পেয়েছে, সেগুলো কি আপনি শর্ত
মেনে লেখেননি? তাছাড়া কবিতা বা যে কোন সৃষ্টিশীল কাজের বেলায় কি কোন শর্ত মেনে চলা সম্ভব?
উৎপলকুমার বসু : আমি শর্তগুলো দেখিনিতবে আমি কোন কাজকে বিচ্ছিন্ন বা আলাদা কাজ বলে দেখি
না, সেটা কবিতা লেখাই হোক, রাজনৈতিক কাজই হোক-- আমি সবকিছুকে একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে
দেখার চেষ্টা করিএটা আমার স্বভাবের জন্যেযেমন পশ্চিমবঙ্গের যারা প্রাতিষ্ঠানিক লেখক তাদের
সঙ্গে যে আমার খুব একটা বিরোধ আছে তা নয়, তারা অনেকেই আমাকে ভালবাসেন, আমিও তাদের
খুব শ্রদ্ধা করি, বড় ধরনের বিরোধ কিছু নেই
ওবায়েদ আকাশ : আপনি নিজে কি প্রাতিষ্ঠানিক লেখক নন?
উৎপলকুমার বসু : আমি প্রাতিষ্ঠানিক লেখক নই, তবে একবার আমাকে একজন বলেছিল, সেখানে
মেইন স্ট্রিম-মেইন স্ট্রিম নিয়ে কথা হচ্ছিল, সে আমাকে বলেছিল, আচ্ছা আপনি কী করে জানছেন যে
আপনি মেইন স্ট্রিম লেখক? তাতে আমি খুব বিস্মিত এবং ভীত হয়ে পড়লামকারণ, ইতোমধ্যে যারা
লেখালেখি করে নামটাম করেছে, তারা সহজে তো আর তাদের আসনটা ছেড়ে দিতে চায় না; এ নিয়ে
একটা ঝামেলা শুরু হয়ে গেল, তখন আমি বললাম : না না আমি মেইন স্ট্রিম লেখক নই
ওবায়েদ আকাশ : মেইন স্ট্রিম লেখক এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখক-- এদেরকে আপনি কীভাবে আলাদা
করেন?
উৎপলকুমার বসু : প্রাতিষ্ঠানিক লেখক বলতে আমি তাদেরকে ধরি, যারা খবরের কাগজে কাজ করে, শুধু
কাজ করে না, সেই কাজ করার ক্ষমতা খাটিয়ে লেখক হয়
ওবায়েদ আকাশ : মেধা দিয়ে যারা লেখক হয়-- মেধা কি এক ধরনের ক্ষমতা নয়?
উৎপলকুমার বসু : না না মেধা দিয়ে লেখক হওয়া যায় না, লেখক হতে হয় সংবেদনশীলতা দিয়ে
সংবেদনশীল মানুষ ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না
ওবায়েদ আকাশ : আপনি প্রাতিষ্ঠানিকতা নিয়ে বলছিলেনঅনেক খ্যাতনামা ভাল লেখক কিন্তু জীবনভর
প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন
উৎপলকুমার বসু : কখনো কখনো কোন ব্যক্তিও প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারেনআমার আপত্তিটা
ওখানেই যখন তিনি অভিভাবকত্ব দেখাতে শুরু করেনকেউ কেউ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এবং সেই সূত্রে
বিখ্যাত লেখক হয়ে ওঠে, এবং মারা যাবার পর লোকে তাকে এক মাসের মধ্যে ভুলে যায়এই সূত্রে
একটা কথা বলি : আমাদের দেশ পত্রিকার সম্পাদক ছিল, এগুলো আবার ছাপিয়ো না, একটু রয়েসয়ে
ছাপিয়ো, সাগরময় ঘোষ, মানে এত ক্ষমতাশালী ছিলেন, যে কোন প্রধানমন্ত্রীরও... তো সাগরময় ঘোষ
মারা যাবার পর, তার শশ্মানে মাত্র আট জন লোক উপস্থিত হয়েছিলতার মধ্যে চারজন ছিল তার
ফ্যামিলির লোকআর শক্তি চট্টোপাধ্যায় যখন মারা যায়, তখন হাজার হাজার লোক বেরিয়ে এসেছিল
রাস্তায়
ওবায়েদ আকাশ : আপনাদের পশ্চিমবঙ্গে সুবিমল মিশ্র নিজেকে প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক বলে মনে
করেনবাংলাদেশেও তার একটা অনুসারী গ্রুপ তৈরি হয়েছেআপনি কি মনে করেন সুবিমল
প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক?
উৎপলকুমার বসু : সুবিমল যদি নিজেকে প্রতিষ্ঠানবিরোধী বলে অভিনয় করে, তাহলে আমি তার আপত্তি
করার কে?
ওবায়েদ আকাশ : আপনি কী মনে করেন : সুবিমল মিশ্রের পরিণতি কার মতো হবে শক্তি চট্টোপাধ্যায় নাকি সাগরময় ঘোষের মতো?
উৎপলকুমার বসু : না, শোন, কোন জিনিসই কখনো অবলুপ্ত হয়ে যায় নাথেকে যায়সুবিমল যে সামান্য কিছু লিখেছে নতুন কিছু লিখেছে তার...
ওবায়েদ আকাশ : প্রতিষ্ঠানবিরোধী হওয়ার অন্যতম শর্ত কি প্রতিষ্ঠিত পত্রপত্রিকায় লেখালেখি না করা?
উৎপলকুমার বসু : না, আমি শুনেছি যে, কোলকাতায় যে সমস্ত বড় বড় পত্রিকা আছে, তার কর্মীদের অন্য
কোন পত্রিকায় লিখতে মানাতুমি যাই বলো না কেন, যা বলেই গালাগাল দেও না কেন, আমি এমনও
শুনেছি যে, লেখা ছিঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে যখন শুনেছে যে, ‘কাগজের কর্মী কাগজে লিখেছে
বা অমুক পত্রিকার পুজো সংখ্যাতে লিখেছেএগুলো ঘটছে কিছু কিছু কাগজের বেলায়আর লিটলম্যাগ
কর্মীদের মধ্যে গোষ্ঠীবদ্ধতা থাকে, সমমনাদের লেখা তারা ছেপে থাকে
ওবায়েদ আকাশ : আনন্দবাজার গ্রুপের দেশপত্রিকা একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান আপনি সেখানে লেখেন
আপনি কি দেশ’-এ লিখেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, নাকি লিটল ম্যাগাজিনে?
উৎপলকুমার বসু : আমি সব পত্রিকায়ই লিখি, এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিতবে লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে
যেটা হয়, ওরা আমার সঙ্গে আলোচনা করে, কথা বলে, অন্যদিকে দেশপত্রিকা হয়তো একটা ডাকে
চিঠি পাঠিয়ে দিল-- এই রকম
ওবায়েদ আকাশ : দেশপত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষের কথা আপনি একটু আগে বলেছেনতার
মৃত্যুর পর পরিবারের চারজনসহ মাত্র ৮জন মানুষ হয়েছিলকিন্তু সম্পাদক থাকা অবস্থায় তিনি প্রায়
প্রধানমন্ত্রীর সমান ক্ষমতাধর ছিলেনতার পত্রিকায় লিখতে কি আপনি নীতিগতভাবে একটুও কুণ্ঠিত হন
না?
উৎপলকুমার বসু : না, এই মাত্র দুদিনের ব্যাপারতবে উনি কিন্তু খুব ভাল লিখতেন
ওবায়েদ আকাশ : আপনার কবিতায় হয়তো ব্যবহারের গুণে, শব্দগুলো অনেক শক্তি ধারণ করে
শব্দগুলোর উলম্ফন ক্ষমতা অনেক তীব্রএক্ষেত্রে সমসাময়িককালে আপনার কবিতার এই শব্দ নিয়ে
খেলা সম্পর্কে আমার মধ্যে অনেক কৌতূহলএত ক্ষমতা কী করে অর্জন করা যায়?
উৎপলকুমার বসু : এটা তোমার গুণতুমি পাঠক হিসাবে এত বেশি গুণবান যে, আমার লেখায় যে
ফল্সগুলো থাকে সেগুলো তুমি দেখতে পাও নাতবে যদি বলো, আমি আমার কথা বলতে পারি যে,
আমার পাঠকের ওপরে আমার গভীর বিশ্বাসআমি আমার কবিতায় গ্যাপগুলোকে ইচ্ছা করেই রেখে
দিইযে যেমন ইচ্ছা ভর্তি করে নিকআমি লিখে গেলাম একজন পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ল, দুপুরের
ভাতটাত খেয়ে-- এই জিনিস হবে নাতাকে একটু উঠে বসে ভাবতে হবে
ওবায়েদ আকাশ : আপনি আপনার লেখালেখির ক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী কোন লেখকদের অবদানকে বেশি
স্বীকার করেন?
উৎপলকুমার বসু : দেখো, বিদেশী লেখকদের একটা জিনিস আমাকে খুব আকর্ষণ করেসেটা হচ্ছে
তাদের সাহসএই সাহস আমি এখানকার মানে ভারতবর্ষের লেখকদের মধ্যে দেখি নাকত
প্রতিকূলতার মধ্যে বিদেশী লেখকরা, শুধু লেখকরা নন, যারা ছবি আঁকেন, ভ্যানগগ কত প্রতিকূলতার
মধ্যে ছবি এঁকেছেন, রিলকের মতো কবি, কোন চাকরি করেনি, এর ওর সাহায্যে থেকেছে, নিজের লেখা
ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনিএই ডেডিকেশনটা এখানকার খুব কম লেখকদের মধ্যে আছেএখানকার
কনটেক্সট আলাদাকিন্তু ইউরোপীয়দের কনটেক্সট আলাদাযেখানে সামান্য একটা বিশ্বাসের জন্য,
সত্যের জন্য বিষ খায়, আত্মহত্যা করে--
ওবায়েদ আকাশ : আপনি কি সে-রকম কোন বিশ্বাস বা সাহস ভেতরে লালন করেন?
উৎপলকুমার বসু : খুব আকৃষ্ট হইতবে এত কিছু বলা কওয়ার পরেও আমি তো একজন ভারতীয়, খুব
ভীতু প্রকৃতির লোকএকজন সাহসী লোককে দেখে হাততালি দেইতবে যদি অগ্রজ কবি লেখকদের
কথা বলো-- টিএস এলিঅট, এজরা পাউন্ড, জেমস জয়েস... এদের লেখাই আমাকে আকৃষ্ট করে
তাছাড়া আমি যেহেতু ইংরেজির ছাত্র, কোন লেখাই ধারাবাহিকভাবে পড়িনিএমনকি আমি বাংলা
সাহিত্যও ওইভাবে ধারাবাহিকভাবে পড়িনি
ওবায়েদ আকাশ : আপনি বাঙালি কোন লেখকদের কথা তো বললেন না?
উৎপলকুমার বসু : সতীনাথ ভাদুড়ীতার জাগরী একটি অসাধারাণ রচনা
ওবায়েদ আকাশ : কেন ঢোঁড়াই চরিত মানস?
উৎপলকুমার বসু : না না, ঢোঁড়াই চরিতের কথা অনেকে বলে
ওবায়েদ আকাশ : কবিদের মধ্যে কার কথা বলবেন?
উৎপলকুমার বসু : জীবনানন্দ দাশসাহিত্যিকদের মধ্যে আর একজন আছেন-- কমলকুমার মজুমদার
এইতো সতীনাথ ভাদুড়ী, জীবনানন্দ দাশ, কমলকুমার মজুমদার-- এই তিনজনের অবদানই তো আমার
জীবনে যথেষ্ট

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫

No comments:

Post a Comment